
ক্ষমতা নেওয়ার ৩৫ দিন পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) মি. বাইডেন প্রথমবারের মত সৌদি বাদশাহ সালমানের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন।
এই ফোনালাপ এমন সময় হলো যখন হোয়াইট হাউজ এক-দুদিনের মধ্যেই সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজি হত্যা নিয়ে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ করতে চলেছে বলে জানা গেছে।
রিপোর্টটি পড়ার পরই এই টেলিফোন কল করেছেন মি,বাইডেন, এবং জোর ইঙ্গিত রয়েছে যে ঐ হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথা রিপোর্টটিতে রয়েছে।
বৃহস্পতিবারের টেলিফোনে আলাপে খাসোগজি হত্যাকাণ্ড এবং যুবরাজ মোহাম্মদ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা তা হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়নি।
তবে এক বিবৃতিতে বলা হয় – প্রেসিডেন্ট বাইডেন “আইনের শাসন এবং সার্বজনীন মানবাধিকারের“ প্রতি তার শক্ত অঙ্গীকারের কথা বলেছেন।
হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লুজাইন আল হাথলুল সহ বেশ ক’জন সৌদি মানবাধিকার কর্মীর কারামুক্তিকে মি. বাইডেন “ইতিবাচক“ অগ্রগতি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
তিন বছর পর এ মাসেই নারী অধিকারকর্মী মিস হাথলুলকে ছাড়া হয় – যদিও তার ওপর শর্ত দেয়া হয়েছে যে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং মিডিয়ার সাথেও কথা বলতে পারবেন না।
দুই নেতা “সৌদি আরব এবং আমেরিকার মধ্যে দীর্ঘ সহযোগিতার সম্পর্ক এবং ইরান সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী সৌদি নিরাপত্তার প্রতি যে হুমকি তৈরি করেছে“ তা নিয়ে কথা বলেন।
গতানুগতিক এই বিবৃতিকে অবশ্য তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিকরা।
তাদের চোখ এখন খাসোগজি হত্যার ওপর সিআইএর রিপোর্টে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কি থাকবে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে মি. বাইডেন কি পথ নেবেন – সেদিকেই।
ফেঁসে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ?
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক এবং যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে হত্যা করা হয় ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে।
এর প্রায় পরপরই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যুবরাজ মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তাদের সন্দেহের কথা জানিয়েছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ।
সে বছরই কংগ্রেসের একটি কমিটিতে তাদের সন্দেহের পক্ষে গোপন তথ্য প্রমাণও তারা দিয়েছিল।
হোয়াইট হাউজ এখন সেই গোপন রিপোর্টের অংশবিশেষ প্রকাশ করতে চলেছে, এবং সরকারী বিভিন্ন সূত্রে নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো বলছে রিপোর্টে খাসোগজি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার কথা রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টর্স বুধবার তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, সিআইএ’র রিপোর্টে এমন কথা রয়েছে যে সৌদি যুবরাজ নিজে খাসোগজি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা “অনুমোদন করেছিলেন এবং সম্ভবত হত্যার নির্দেশও তিনি দিয়েছিলেন।“
যদিও সৌদি সরকার সমসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তাদের বক্তব্য – সৌদি নিরাপত্তা বিভাগের একটি অংশ সরকারের অগোচরে নিজেদের সিদ্ধান্তে ঐ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি, ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং ব্যক্তি যুবরাজ মোহাম্মদের ব্যাপারে তার নেতিবাচক মনোভাব কখনই চেপে রাখেননি জো বাইডেন।
আরও পড়ুনঃ মনসুনের আগে বঙ্গোপসাগরে এরকম ঝড় এই শতাব্দীতে প্রথম বলে ভারতে হুঁশিয়ারি
২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে এক বিতর্কে তিনি খোলাখুলি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই জামাল খাসোগজিকে হত্যা করা হয়েছে, এবং “সৌদি আরবকে এর জন্য জবাবদিহি করা হবে।“
মি. বাইডেন যে একেবারে ফাঁকা বুলি দেননি তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই ইয়েমেনের যুদ্ধে সৌদি আরবকে সহযোগিতা বন্ধের কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।
এরপর খাসোগজি হত্যাকাণ্ড নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আরো খোলাসা করলেন।
সৌদি-আমেরিকা সম্পর্কে নতুন রূপ
খাসোগজি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ১৭ জনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের সম্পদ আটকে রাখাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে।
ম্যাগনিস্তকি অ্যাক্ট নামে এক বিশেষ আইনের আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
কিন্তু সেই আইন কি যুবরাজ মোহাম্মদের ওপরও প্রয়োগ করবে বাইডেন প্রশাসন?
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান গত সপ্তাহে সিএনএনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সিআইএর রিপোর্টটি প্রকাশের পর অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ জড়িত থাকলে তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা তা খোলাসা করেননি তিনি।
তবে সৌদি যুবরাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য হোয়াইট হাউজের ওপর নানা দিক থেকে চাপ রয়েছে।
সৌদি যেসব ভিন্নমতাবলম্বী যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকেও বিবৃতি জারি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আজ (শুক্রবার) কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট সদস্যদের পক্ষ থেকে খাসোগজি হত্যাকাণ্ডের জন্য সৌদি সরকারকে দায়ী করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হতে পারে।
বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক জাতিসংঘের র্যাপোর্টিয়ার অ্যাগনেস কারামার্ড, যিনি খাসোগজি হত্যাকাণ্ডেরও তদন্ত করেছেন, ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেছেন যদি গোয়েন্দা তথ্যে সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় – তাহলে তার ওপর অন্তত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অবশ্যই উচিৎ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বিবিসির সংবাদদাতা বারবারা প্লেট-উশের বলছেন, সরকারি রিপোর্টে হত্যার নির্দেশদাতা হিসাবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদের নাম আসলে তা দুই দেশের সম্পর্কে নি:সন্দেহে চাপ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, “একদিন হয়তো এই যুবরাজই হয়তো আমেরিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মিত্র দেশের সর্বেসর্বা হবেন, এবং খুব দ্রুতই হয়তো তিনি তা হয়ে যেতে পারেন।“
সেই বিবেচনায় অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন সিআইএর রিপোর্টে যুবরাজ মোহাম্মদের নাম করা হলেও তাকে হয়তো ব্যক্তিগতভাবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে না।
বড়জোর আমেরিকায় সৌদি রাষ্ট্রীয় তহবিলের বিনিয়োগ নিষিদ্ধ সহ কিছু ব্যবস্থা হয়তো দেখা যেতে পারে।
বিবিসির বারবারা প্লেট মনে করেন হোয়াইট হাউজ হয়তো তাদের অসন্তোষ জানাবে, ব্যক্তিগত জবাবদিহিতার কথা বলবে, তবে একই সাথে “কিছু ক্ষেত্রে রিয়াদের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।“
তবে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে খুব স্পষ্ট করে জানান দেয়া হচ্ছে যে মি. ট্রাম্পের চার বছরে যেভাবে চলেছে সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক – তা আর একই কায়দায় চলবে না।
সে কারণেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন কথা বলেছেন সৌদি বাদশাহর সাথে – যদিও সরকার কার্যত চালাচ্ছেন তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ।
হোয়াইট হাউজ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে এখন থেকে এটাই হবে তাদের নীতি।
“প্রেসিডেন্ট বাইডেন সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কে নতুন কাঠামো দেবেন,“ খোলাখুলি বলেছেন তার মুখপাত্র জেন সাকি।
Visit Our Facebook Page : Durdurantonews
Follow Our Twitter Account : Durdurantonews